নিশ্চিত ছিল শুধু একটি ড্র পেলেই চলবে, তবে অ্যানফিল্ডের মাঠে প্রথম মিনিট থেকেই টটেনহ্যাম হটস্পারকে রীতিমতো দমিয়ে রেখে খেলেছে লিভারপুল। যদিও শুরুতে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে, এরপর দুর্দান্ত আক্রমণের জোয়ারে বিরতির আগেই তিন গোল আদায় করে নেয় তারা। দ্বিতীয়ার্ধেও বজায় থাকে গোলের ধারা, আর উৎসবের আমেজে নিশ্চিত হয় ৫-১ ব্যবধানের বিশাল জয়। সেই সঙ্গে পাঁচ বছর পর আবারও প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে মাতল অ্যানফিল্ড। প্রথম মৌসুমেই লিভারপুলের কোচ হিসেবে সাফল্যের স্বাদ পেলেন আর্নে স্লট।
রোববারের ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে ৩৪ ম্যাচে ২৫টি জয়ের মাধ্যমে ৮২ পয়েন্ট অর্জন করেছে লিভারপুল। যেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের পয়েন্ট ৬৭। ২০১৯-২০ মৌসুমের পর এটাই লিভারপুলের প্রথম লিগ শিরোপা।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে নিজেদের মাঠে টটেনহ্যামের বিপক্ষে শেষ ১৬ ম্যাচের মধ্যে এটি লিভারপুলের ১২তম জয়। বিশেষ করে আগের তিন ম্যাচেই চার গোলের ব্যবধানে জয় পেয়েছিল, এবার সেই ধারাকে আরও রাঙিয়ে তুললো তারা।
প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের বিপক্ষে টটেনহ্যামের এটা শেষ ২৫ ম্যাচে ১৭তম হার। পাশাপাশি স্পার্সরা লিগে টানা ১৯ ম্যাচ ধরে রেডদের বিপক্ষে কোনো ক্লিন শিট রাখতে ব্যর্থ হলো। মৌসুম জুড়ে দুই দলের সাক্ষাতে টটেনহ্যাম হজম করল মোট ১৫টি গোল — প্রিমিয়ার লিগে প্রথম দেখায় ৬-৩ ব্যবধানে হারার পর লিগ কাপ সেমিফাইনালেও ৪-০ গোলে হারতে হয়েছিল তাদের।
ম্যাচের শুরুতে যদিও চমক দেখায় টটেনহ্যাম। ডান দিক থেকে আসা মেডিনসনের ক্রসে নিখুঁত হেডে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করেন ডমিনিকো সোলানকে। তবে তাদের সেই এগিয়ে থাকা বেশিক্ষণ টেকেনি। দ্রুতই সমতায় ফেরে লিভারপুল, যদিও প্রথমে অফসাইডের কারণে লুইস দিয়াসের গোল বাতিল হয়। সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি যাচাই করে পরে সেই গোল বৈধ ঘোষণা করা হয়, আর লিভারপুল ফিরে পায় আত্মবিশ্বাস।
এরপর আক্রমণের ধার ধরে রেখে রায়ান গ্রাভেনবার্চের পাস থেকে দূরপাল্লার শটে জালের দেখা পান অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। এরপর কর্নার থেকে আবারো ম্যাক অ্যালিস্টারের সহায়তায় গোল করে স্কোরলাইন ৩-১ করেন কোডি গাকপো। এই গোলটি ছিল গাকপোর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দশ ম্যাচের মধ্যে প্রথম।
বিরতির পরও আক্রমণের গতি একটুও কমেনি লিভারপুলের। ৬৩তম মিনিটে মোহামেদ সালাহ নিজের নাম লেখান স্কোরশিটে। এরপর ডেসটিনি উদোগুয়ের আত্মঘাতী গোলে ৫-১ ব্যবধানে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে নটিংহাম ফরেস্টের কাছে হারের পর লিগে টানা ২৯ ম্যাচে অন্তত একটি করে গোল করেছিল লিভারপুল। এই ম্যাচের মাধ্যমে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৩০-এ। আর্সেনালের ২০০১-০২ মৌসুমে করা ৩৮ ম্যাচে টানা গোলের পর এটাই ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টানা গোলের রেকর্ড।
অ্যানফিল্ডে বিশাল জয়, দুর্দান্ত ফুটবল আর শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত শিরোপা — সব মিলিয়ে এক রূপকথার রাত কাটাল লিভারপুল ও তাদের সমর্থকরা।