তারকাময় এক সন্ধ্যায় জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঘোষণা হলো ২০২৪ সালের ক্রীড়াবিদদের স্বীকৃতি। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের মিলনায়তনে বসেছিল বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বিএসপিএ আয়োজিত কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডের বর্ণাঢ্য আসর। সেখানে বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
আওয়াজে, আলোয় আর করতালিতে মুখর সেই সন্ধ্যায় মঞ্চে পাশাপাশি ছিলেন ক্রিকেটার মিরাজ ও আর্চার সাগর ইসলাম। সঞ্চালক কাজী সাবির মজা করে প্রশ্ন করলেন মিরাজকে, “আপনি তো বড় ভাই, সাগরকে একটু ছাড় দেবেন?” জবাবে মিরাজ জানালেন, “স্পোর্টসম্যানেরা খেলার জগতে কাউকে ছাড় দেয় না।” মুহূর্তেই হলরুমজুড়ে বেজে ওঠে করতালি। পাল্টা জবাবে সাগর বললেন, “খেলার মাঠে ভাই-ব্রাদার বলে কিছু নেই।”
তখনই ঘোষণা এল সেই কাঙ্ক্ষিত পুরস্কারের— বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের মুকুট উঠেছে মেহেদী হাসান মিরাজের মাথায়। পেছনে ফেলেছেন প্যারিস অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা আর্চার সাগর ইসলাম এবং জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করে সাফ জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ঋতুপর্ণা চাকমাকে।
তবে হাতখালি ছিলেন না ঋতুপর্ণা। তিনি পেয়েছেন দর্শকদের ভোটে নির্ধারিত পপুলার চয়েজ অ্যাওয়ার্ড, যেখানে তিনি ছাড়িয়ে যান মিরাজ ও উদীয়মান পেসার নাহিদ রানাকে। ভুটান লিগে খেলতে থাকায় ঋতুপর্ণা উপস্থিত থাকতে পারেননি, তবে ভিডিও বার্তায় জানালেন, এই পুরস্কার ভবিষ্যতে তাকে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা দেবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জানান, বর্তমান সরকার ক্রীড়াক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। বাজেট স্বল্পতার মাঝেও ক্রীড়াঙ্গনে আরও প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিন বিএসপিএ সভাপতি রেজওয়ান উজ জামান রাজিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বর্ণিল আয়োজনে ক্রীড়াক্ষেত্রের ১৫টি ক্যাটাগরিতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় ১৩ জন ক্রীড়াবিদ, দল ও সংস্থার হাতে। বর্ষসেরা দলের স্বীকৃতি পেয়েছে অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় হকি দল, যারা প্রথমবারের মতো জুনিয়র বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে।
এছাড়া জাতীয় দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা উদীয়মান পেসার নাহিদ রানা হয়েছেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রীড়াবিদ। বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার উঠেছে হকি কোচ মওদুদুর রহমান শুভর হাতে, আর বর্ষসেরা আম্পায়ারের স্বীকৃতি পেয়েছেন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত।
এই আয়োজন শুধু পুরস্কার প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং দেশের নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের মিলনমেলাও ছিল। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের সেরা ক্রীড়াবিদদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও। ক্রীড়াঙ্গনের এমন সম্মাননা অনুষ্ঠান প্রতিটি অ্যাথলেটকে অনুপ্রাণিত করবে— এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজকদের।