ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডে রোববার ছিল তিনটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ। একদিকে রেলিগেশন লড়াইয়ে টিকে থাকতে মরিয়া ব্রাদার্স ইউনিয়ন, অন্যদিকে সুপার লিগ নিশ্চিত করা দলগুলোর অভ্যন্তরীণ শক্তি যাচাইয়ের মঞ্চ। তবে দিন শেষে আলো কাড়লেন গাজী গ্রুপের লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকি, পারটেক্সের অধিনায়ক আহরার আমিন ও অগ্রণী ব্যাংকের টপ-অর্ডার ব্যাটাররা।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে টিকে থাকার লড়াইয়ে মাঠে নামা ব্রাদার্স ইউনিয়ন ওয়াসির বিধ্বংসী স্পিনে মুখ থুবড়ে পড়ে গাজী গ্রুপের কাছে। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট দেখায় গাজী গ্রুপ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মুনিম শাহরিয়ার, সাদিকুর রহমান ও এনামুল হকরা দলকে এনে দেন শক্ত ভিত। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। মিডল অর্ডারে এসে অভিজ্ঞ শামসুর রহমান খেলে যান ৮৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস, যার সঙ্গে শামিম মিয়ার ৪২ রানের ইনিংস মিলে গড়ে তোলে বড় সংগ্রহের ভিত্তি। আর শেষ দিকে সালমান হোসেন ফিরেই ২৭ বলে ঝড়ো ৫১ রান তুলে ম্যাচের রঙ বদলে দেন।
৩০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভালো শুরু করে ব্রাদার্স। দ্বিতীয় উইকেটে মাহফিজুল ও জাহিদুজ্জামানের ১১০ রানের জুটি আশা জাগালেও হঠাৎ করেই হানা দেয় ওয়াসির ঘূর্ণি। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই টানা দুই বলে ফিরিয়ে দেন মাহফিজুল ও আইচ মোল্লাকে। হ্যাটট্রিকের সুযোগে মাইশুকুর রহমান এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লেও আম্পায়ারের সাড়া না পেয়ে হাতছাড়া হয় সেই ইতিহাস। তবে এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে। একে একে আরও চার উইকেট তুলে নিয়ে ১০ ওভারে ৫২ রানে ৬ উইকেটের দুর্দান্ত বোলিং করেন ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ লেগ স্পিনার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটিই তার প্রথম পাঁচ উইকেট পাওয়া ম্যাচ। যদিও ব্রাদার্সের জাহিদুজ্জামান ১২২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন, কিন্তু ওয়াসির স্পিন সামনে শেষ রক্ষা হয়নি। গাজী গ্রুপ ৫১ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে এবং সুপার লিগে তৃতীয় দল হিসেবে জায়গা করে নেয়।
এদিন বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবকে হারিয়ে রেলিগেশন লিগ নিশ্চিত করলেও ম্যাচটা জমিয়ে দেন আহরার আমিন। বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়েও ৮৫ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন পারটেক্স অধিনায়ক। ম্যাচের শুরুতেই শহিদুল ইসলামের স্পিন আক্রমণে ৪০ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট হারায় ধানমন্ডি। তখন থেকেই পুনরুদ্ধার করেন ইয়াসির আলি ও মইন খান। দুজনে সপ্তম উইকেটে গড়েন ১৩৯ রানের জুটি। ইয়াসির আউট হন ৯০ রানে, মইন ফেরেন ৮০ রান করে।
রান তাড়ায় সাব্বির রহমানের ৪৭ রানের সঙ্গে আহরারের ধৈর্যশীল ইনিংস যোগ হয় ম্যাচে ভারসাম্য। শেষদিকে মুক্তার আলির সঙ্গে ৫২ রানের জুটি দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যায়, যদিও জয়রজ ও শহিদুলের দ্রুত বিদায়ে কিছুটা চাপ বাড়ে। শেষপর্যন্ত দলকে জয় এনে দেন আহরার নিজেই।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনের সবচেয়ে বিস্ময়কর ফলটা আসে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ বনাম অগ্রণী ব্যাংকের ম্যাচে। প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসা অগ্রণী ব্যাংক তারকায় ভরপুর রূপগঞ্জকে ৮৯ রানে হারিয়ে দেয়।
অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে টপ অর্ডারে ঝলসে ওঠেন সাদমান ইসলাম, ইমরানউজ্জামান ও অমিত হাসান। জাতীয় দলের জন্য নির্বাচিত হওয়ায় লিগের শেষ ম্যাচে ৮৭ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন সাদমান। ইমরানের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ১০৫ রান। এরপর অমিত ৫৯ ও মার্শাল আইয়ুব ৪৮ রানে খেলেন কার্যকরী ইনিংস।
৩০৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রূপগঞ্জ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায়। মাহমুদুল হাসান জয় সর্বোচ্চ ৩৩ রান করলেও কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সৌম্য সরকার, আকবর আলি, আফিফ হোসেন, তানজিদ হাসান সবাই ২০-৩০ রানের মাঝে থেমে যান। অগ্রণীর বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল রবিউল হক, ৪ উইকেট নিয়ে ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দেন। ২১৭ রানে থেমে যায় রূপগঞ্জের ইনিংস।
এই জয়ে অগ্রণী ব্যাংক ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগে দ্বিতীয় অবস্থানে শেষ করে প্রথম পর্ব, এক পয়েন্ট পিছিয়ে ঠিক তাদের নিচেই রূপগঞ্জ।