Sunday, April 13, 2025
spot_img
হোমক্রিকেট‘ডট বল ফর ট্রিস’ কি কেবল প্রচারণা?

‘ডট বল ফর ট্রিস’ কি কেবল প্রচারণা?

আইপিএলের মাঠের উত্তেজনা এবার ছড়িয়েছে মাঠের বাইরেও, তবে একেবারে ভিন্ন কারণে। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ‘ডট বল ফর ট্রিস’ নামক প্রশংসনীয় প্রকল্পটি নিয়েই এবার উঠেছে নানা প্রশ্ন। চলতি ২০২৫ মৌসুমে ডট বলের বিপরীতে গাছ লাগানোর এই উদ্যোগ শুরু থেকেই কার্যকর থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে এসব গাছ আদৌ রোপণ করা হচ্ছে কিনা—সে বিষয়ে উঠেছে ব্যাপক সন্দেহ।

প্রথমবার এই প্রকল্প চালু হয়েছিল ২০২৩ সালের প্লে-অফ পর্ব থেকে, যেখানে প্রতি একটি ডট বলের বদলে ৫০০টি করে গাছ রোপণের ঘোষণা দেয় বিসিসিআই। এরপর ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয়বার সেই প্রচারণা চালানো হয়। কিন্তু চলতি ২০২৫ আসরে লিগপর্ব থেকেই এই কার্যক্রম চালু করার পর, হঠাৎ করেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।

নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে ১১ এপ্রিল, কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংসের মধ্যকার ম্যাচে। মাত্র ১০৩ রানে অলআউট হওয়া চেন্নাই খেলেছিল ৬১টি ডট বল। নাইট রাইডার্স সেই হিসাবে ঘোষণা দেয় তারা রোপণ করবে ৩০,৫০০ গাছ। কিন্তু সেই পোস্টেই প্রশ্ন তুলেছেন অসংখ্য ক্রিকেট সমর্থক—“গাছগুলো কোথায় লাগানো হচ্ছে?”, “এত গাছ রোপণের কোনো প্রমাণ আছে কি?” কেউবা আবার এই বিষয়ে বিস্তারিত অফিসিয়াল তথ্য চেয়ে বসেন।

বিশ্ব উষ্ণতা কমাতে পরিবেশবান্ধব এই পদক্ষেপের আওতায় আইপিএল কর্তৃপক্ষ আরও বেশ কিছু উদ্যোগ চালু করেছে—সোলার বাতি, ডিজিটাল টিকিটিং, স্টেডিয়ামে প্লাস্টিক বিরোধী প্রচারণা, এমনকি পরিবেশবান্ধব সবুজ টি-শার্টের ক্যাম্পেইনও চালিয়েছে তারা।

প্রথম দুই আসরে বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান যেমন জেএসডব্লিউ ও টাটা এই প্রকল্পে যোগ দেয় আর্থিক সহায়তা ও মিডিয়া কভারেজ দিয়ে। ‘ডট বল ফর ট্রিস’ এবং ‘আইপিএল গ্রিন’ নামের হ্যাশট্যাগে মেতে উঠেছিল গোটা ক্রিকেটদুনিয়া।

তবে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় যখন দেখা যায়—২০২৩ সালে রোপিত ১ লাখ ৪৭ হাজার গাছ, এবং ২০২৪ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার গাছ রোপণের দাবি থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে কেবল একটি দিন, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে, বিসিসিআই একটি অফিসিয়াল ছবি প্রকাশ করেছিল বেঙ্গালুরুর সেন্টার অব এক্সিলেন্সি থেকে। সেটিও ছিল ৪ লাখতম গাছ রোপণের দাবির অংশ। সেই পোস্টের নিচেই নেটিজেনদের প্রশ্ন ছিল—“বাকি গাছগুলো কোথায় গেল?”

চলতি আইপিএলের হিসাবেও ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ডট বল দাঁড়িয়েছে ৩১২টিতে, অর্থাৎ গাছ রোপণের সংখ্যা ইতোমধ্যে ছুঁয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার! কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক গাছ কোথায়, কে লাগিয়েছে, কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে—এসবের কোনোই স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

সামাজিক সচেতনতা থেকে এমন মহৎ উদ্যোগের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে একসময় সেটিই পরিণত হতে পারে শুধুই এক ঝলকাতুরে প্রচারণায়—এই আশঙ্কাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমী ও পরিবেশ সচেতনদের মনে।

RELATED ARTICLES

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Most Popular

Recent Comments